**
নীচের যৌথ বিবৃতিটি আজ — ২১শে নভেম্বর ২০২৫ — দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রকাশ করা হলো।
*শ্রম কোডের বিজ্ঞপ্তি জাতির কর্মজীবী মানুষের উপর প্রতারণামূলক আক্রমণ, শ্রমিক শ্রেণির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতারণা। ২৬শে নভেম্বর প্রতিরোধ ও অমান্যতার আহ্বান – যৌথ ট্রেড ইউনিয়ন প্ল্যাটফর্মের ডাক*
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ প্ল্যাটফর্ম আজ থেকে কার্যকর করা হয়েছে এমন শ্রমিক-বিরোধী, কর্পোরেট-পোষক শ্রম কোডগুলির একতরফা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে। নিঃসন্দেহে আমরা এটিকে বলি — কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতারণা, যা দেশের কর্মজীবী মানুষের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছে।
এই চারটি তথাকথিত “শ্রম কোড” আজ ২১শে নভেম্বর ২০২৫-এ যে একতরফা ও অগণতান্ত্রিকভাবে জারি করা হয়েছে, তা ভারতের কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের চরিত্র ধ্বংস করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে রীতিমতো পদদলিত করেছে।
দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং স্বাধীন শিল্প ফেডারেশনগুলির এই ফোরাম শ্রম কোডগুলির বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই লড়াই করে আসছে, যেদিন থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ২৯টি কেন্দ্রীয় শ্রম আইন বাতিল করে এগুলো পাস করেছিল। ২০১৯ সালে কোড অন ওয়েজেস পাস হওয়ার পরই প্রবল প্রতিবাদ গড়ে ওঠে, যার পরিণতি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের সাধারণ ধর্মঘট। পরবর্তীতে অন্য তিনটি কোড — ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড, সোশ্যাল সিকিউরিটি কোড, অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ ও ওয়ার্কিং কন্ডিশনস কোড — ২০২০ সালে পাস হলে, সেপ্টেম্বর মাসে আন্দোলন শুরু হয় এবং ঐতিহাসিক ২৬শে নভেম্বর সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয় SKM-এর ঐতিহাসিক "দিল্লি চলো" আন্দোলনের সঙ্গে একতানে। পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিক যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে ৯ই জুলাই ২০২৫-এর সাধারণ ধর্মঘটে ২৫ কোটির বেশি শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন।
এত প্রতিরোধ থাকা সত্ত্বেও, বিহার নির্বাচনে জয়ের উচ্ছ্বাসে বিভোর কেন্দ্রীয় সরকার শ্রম কোড বাস্তবায়নে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে—যা শ্রম মন্ত্রকের বিবৃতি ও টুইটে স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন প্ল্যাটফর্ম ILC (Indian Labour Conference)-এর বৈঠক অবিলম্বে ডাকতে সরকারকে অনুরোধ করে এবং শ্রম কোড বাতিলের দাবি তোলে। ১৩ই নভেম্বর “শ্রম শক্তি নীতি ২০২৫”-এর খসড়া নিয়ে মন্ত্রকের বৈঠকেও একই দাবি জানানো হয়।
২০শে নভেম্বর অর্থ মন্ত্রকের প্রাক-বাজেট বৈঠকেও ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে শ্রম কোড বাতিল ও ILC পুনরায় চালুর দাবি জানানো হয় — যা ২০১৫ সালের পর আর ডাকা হয়নি। কিন্তু সরকার নীরব থেকেছে।
বরং প্রতিবাদ, ধর্মঘট, আবেদন—কিছুই আমল না দিয়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার আজ থেকে শ্রম কোড বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা মূলত কর্পোরেট ও প্রো-গভর্ণমেন্ট সংগঠনগুলির চাহিদা পূরণ করতে। CTU-র যৌথ প্ল্যাটফর্ম শ্রম কোড বাস্তবায়নকে গণবিরোধী, সর্বাধিক প্রতিক্রিয়াশীল এবং শ্রমিকবিরোধী পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়ে কঠোর নিন্দা জানায়। CTU-র মতে এই কোডগুলি শ্রমিকদের জীবিকা ও অধিকার ছিনিয়ে নিতে “আধুনিক দাসত্ব” চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
যদি এই কোডগুলি কার্যকর হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আশা, অধিকার, সুরক্ষা—সবই ধ্বংস হবে।
ভারতের বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিক ও স্বাধীন ফেডারেশনগুলোকে ২৬শে নভেম্বর ২০২৫ তারিখে কৃষকদের SKM নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সঙ্গে দেশব্যাপী প্রতিরোধ ও অমান্যতার কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে — শ্রম কোড বাতিল এবং শ্রম শক্তি নীতি ২০২৫ প্রত্যাহারের দাবিতে।
ইউনাইটেড প্ল্যাটফর্ম সব শ্রমিককে কালো ব্যাজ পরিধানের আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার থেকে গেট মিটিং, স্ট্রিট কর্নার মিটিং, বস্তি ও কর্মস্থলভিত্তিক মিটিং—সবই যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে সংগঠিত হবে, যাতে সরকারের পরিকল্পনা—শ্রমিকদের দাসত্বে ঠেলে দেওয়া ও উৎপাদক শ্রেণিকে কর্পোরেটের লাভে সঁপে দেওয়া—ফাঁস করা যায়।
CTU-রা স্পষ্ট জানাচ্ছে যে— এই শ্রম কোড কার্যকর করা, ভয়াবহ বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির সময়ে— শ্রমিক শ্রেণির উপর যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়া আর কিছু নয়। কর্পোরেট-পোষিত এই সরকারের লক্ষ্য দেশকে আবার প্রভু-ভৃত্য শাসনে ফিরিয়ে নেওয়া।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের শক্ত অঙ্গীকার, যতদিন না এই শ্রম কোড প্রত্যাহার করা হচ্ছে, ভারতের শ্রমিক শ্রেণি ঐক্যবদ্ধভাবে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাবে।
INTUC • AITUC • HMS • CITU • AIUTUC • TUCC • SEWA • AICCTU • LPF • UTUC |